মোঃমাকসুদ আলম (লালমোহন প্রতিনিধি)
ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া খালগোড়া এলাকা। রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টে যেতে শুরু করে এই এলাকার চিত্র। একের পর এক অটোরিকশা এবং পিকআপভ্যান বিভিন্ন এলাকা থেকে গিয়ে জমা হয় ওই এলাকায়। সেসব অটোরিকশা ও পিকআপভ্যানে থাকে প্লাস্টিকের ড্রাম। এসব ড্রামে ভর্তি থাকে বাগদা এবং গলদা চিৎড়ির রেণু। প্রতিদিন কয়েক লাখ রেণু গজারিয়া খালগোড়া এলাকা থেকে ট্রলারযোগে নৌপথে পাচার হয় পটুয়াখালীর দশমিনা ও বাউফল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সেখান থেকে আবার চিংড়ির এসব রেণু পাঠানো হয় খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।জানা গেছে, নিষিদ্ধ মশারি ও ঠেলা জাল দিয়ে জেলেরা নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু আহরণ করেন। এ রেণু আহরণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই তারা ধ্বংস করছেন হাজারো প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি। একটি চিংড়ির রেণু ধরার জন্য অন্য প্রজাতির নয় থেকে ১২টি রেণু ধ্বংস করা হয়। এর ফলে দুইশ প্রজাতির মাছ, বিভিন্ন প্রকারের জলজপ্রাণী ও খাদ্যকণা প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে। যে কারণে নদীতে অন্য প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমশ ভেঙে পড়ছে জলজপ্রাণির বাস্তুসংস্থান বা আন্তঃনির্ভরশীলতা। যার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাগদা ও গলদা প্রজাতির রেণু আহরণ ও সংরক্ষণ পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
সূত্রের তথ্যমতে, ৫ আগস্টের আগে চিংড়ির এসব রেণু লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের কয়েকটি ¯পট দিয়ে পাচার হতো। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দেবীরচর এলাকা। তখনকার কয়েকজন ক্ষমতাবান এই পাচার কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে ৫ আগস্টের পর কয়েক মাস চিংড়ির রেণু পাচার বন্ধ থাকলেও গত জানুয়ারি মাস থেকে ফের শুরু হয় পাচার কার্যক্রম। এরইমধ্যে প্রায় সাড়ে চারশত ড্রামে কয়েক কোটি রেণু পাচার হয়েছে। এই রেণু নির্ভয়ে পাচারের জন্য পথে পথে রয়েছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার সমন্বয়ে এই রেণু পাচার সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে রয়েছেন বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের নসু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনিই নিয়মিত সেখানকার শিপন মাঝির সঙ্গে চুক্তি করে তার ট্রলার দিয়ে গজারিয়া খালগোড়া থেকে নৌপথে চিংড়ির রেণু পাচার করছেন। লালমোহনের গজারিয়া খালগোড়া থেকে এসব রেণু নিরাপদে পাচার করতে সহযোগিতা করছেন ওই এলাকার কথিত দুই প্রভাবশালী। তারা প্রতি ড্রামের জন্য তিনশত টাকা করে নেন। সূত্র আরো জানায়, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়াসহ ওই উপজেলার কয়েকটি ঘাট ও লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ এবং মঙ্গলসিকদার ঘাটসহ কয়েকটি স্থান থেকে রেণু ভর্তি করে প্লাস্টিকের ড্রামে করে পিকআপভ্যান ও অটোরিকশাযোগে গজারিয়া শিমুলতলা এলাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় খালগোড়া ঘাটে। এরপর গভীর রাতে এই পাচার চক্রের মূল হোতা নসু মিয়ার নির্ধারিত ট্রলারযোগে প্রতিবার কমপক্ষে ২০টি প্লাস্টিকের ড্রামে করে কয়েক লাখ চিংড়ির রেণু নিয়ে যাওয়া হয় দশমিনা এবং বাউফলের বিভিন্ন এলাকায়।
চিংড়ির রেণু পাচারের মূল হোতা নসু মিয়ার নির্ধারিত স্টাফ সিদ্দিক মিয়াও স্বীকার করেছেন এই পাচারের কথা। তার ভাষ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে নতুন করে চিংড়ির রেণু পাচার শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ২০৫, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৯৮ এবং মার্চ মাসের শুরুর প্রথম সপ্তাহে ৩০টি ড্রামে করে রেণু পাচার করা হয়েছে। এ তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত সর্বমোট ৪৩৩ ড্রাম রেণু পাচার হয়। এই কয়েক মাস রেণু পাচারের জন্য লালমোহনের গজারিয়াতেই লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯শ টাকার মতো।
চিংড়ির রেণু পাচারের ব্যাপারে মূল হোতা নসু মিয়া বলেন, আমি কোনো রেণু পাচার করছি না। গজারিয়া এলাকায় কয়েকজন আছেন, তারা কীভাবে কি করেন আমি জানি না।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলী আহমেদ আখন্দ জানান, চিংড়ির রেণু পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা অভিযান চালাবো।
যোগাযোগ
বার্তা বিভাগঃ 01788-729304, 01883-306048
ই-মেইল: shadhinsurjodoy@gmail.com
কার্যালয়: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বাধীন সূর্যোদয় | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।