মোঃ মিলন হক
মুসাফির চলে দিক দিগন্তে। অতীতে তার একটা সুখের সংসার ছিল। রাস্তায় বাস দুর্ঘটনায় তার পরিবারের সদস্যরা শেষ হয়ে গেছে। তার স্মৃতি শক্তি আগের তুলনায় কিছুটা লোপ পেয়েছে। তার ভাইয়েরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
তার থাকার মতো আশ্রয় নেয়। তাই সে দিক দিগন্তে ছোটে , যেখানে রাইত সেখানে কাইত।
মুসাফির অজানা কে জানার উদ্দেশ্যে মাতাল অবস্থায় ছোটে। তার পরিবারের কেউ নেই এ নিয়ে তার মনে চির অশান্তি।
মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা সংসার।
যার সংসার নেই, তার জন্ম বৃথা। মানুষের এত্তো কিছু করার মূলে সংসার।
মুসাফির ছোটে আর মানব জীবনের রহস্য উন্মোচন করে। মুসাফির সুখের অন্বেষণ করে। মুসাফির একজন মুসলমান হওয়ায়, শুরু দিকে মসজিদে ঘুমাইতো। তিনি নামাজ পড়েন।
মানুষের জীবনের সুখের রহস্য উদঘাটনের জন্য মসজিদ ছেড়ে, মানুষের বাড়িতে বাড়িতে থাকা শুরু করে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন বাড়িতে যায়। রাতের আশ্রয় খোঁজে।
মুসাফির প্রথম যে বাড়িতে রাতের আশ্রয় নেয়।
সে বাড়িটি ছিল একজন মুসলমানের। ঐ বাড়িতে গত কয়েক মাস আগে বাড়ির কর্তা রহমান মিয়া বিজলী পড়ে , প্রান্তরে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করার কালে মারা গেছে। পরিবারের মানুষের মুখে মৃত্যুর শোক। তাদের সুখের দিন ফুরিয়ে গেছে! সংসার চলে না। তারা মুসাফির কে আশ্রয় দিয়েছে কিন্তু রাতের খাবার দিতে পারে না। মুসাফির তাদের দুঃখ কষ্ট দেখে খুবই ব্যথিত হয়।
মুসাফির এরপরের দিন আরেক মুসলমানের বাড়িতে যায়।ঐ পরিবারের ছোট ছেলেটি গত ৫০ দিন পূর্বে জল ডুবি হয়ে মারা গেছে। কারো মনে সুখ নেই। মা পাগলের মতো বাড়িতে থাকে।
মুসাফির পরের দিন আবার একজন মুসলমানের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়ে দেখে ঐ পরিবারে দুজন বৃদ্ধ লোক আছে। উনারা চিকিৎসার অভাবে রোগে রাতের বেলা চিৎকার করে। বাড়ির কর্তা তাদের ছেলে হয়। তিনি টাকা অভাবে বাবা-মায়ের চিকিৎসা করাতে পারছে
না।
মুসাফির পরের দিন সন্ধ্যায় এক গ্রামের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। আশেপাশে মুসলমান গ্রাম দেখতে না পেয়ে এক হিন্দু বাড়িতে আশ্রয় নেয়। হিন্দু বাড়িতে একটি মাত্র গরু আছে। ঐ গরুর দুধ দিয়ে তাদের সংসার চলে। রাতে গরুটি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। অপরদিকে ঐ লোকের কাছে গরুর চিকিৎসার জন্য টাকাও নেই।
গরুর দুধ বিক্রি করে সন্ধ্যায় চাল, ডাল নিয়ে এসেছে। দুই স্বামী- স্ত্রী সারারাত ভগবানের আরাধনা করে গরুর সুস্থতার জন্য। সারারাত তাদের চোখে ঘুম নেই।
মুসাফির পরের দিন আবার একজন কর্মকারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কর্মকারের বাড়িতে তার ছেলে গুলো সারারাত জেগে দা,বটি,কোদাল, কান্তি ইত্যাদি তৈরি করে। ভোরের দিকে বিছানায় যায়। মুসাফির ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাদের হাত দেখে, দেখতে পাই হাত গুলো লাল হয়ে গেছে।
পরের দিন একজন মুচির বাড়িতে যায়।
মুচির জুতা সেলাই করে সংসার চালাইতে পারে না। খুব সামান্য আয় হয়,জুতা সেলাই করে।
এ নিয়ে রাতে মুচি আর তার বউ ভীষণ মারামারি শুরু করে। মুসাফির তাদের মারামারি বন্ধ করে।
মুসাফির পরের দিন যায় রায় পরিবারে।
রায় পরিবারের কর্তা সারারাত বাঁশ দিয়ে কুলো,ঢাকি, বাঁশের ঝাড়ু ইত্যাদি বানায়। সকালে স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য।
মুসাফির তাঁতি পাড়ায় আশ্রয় নেয়। বিজন তাঁতির বাড়িতে,সেখানেও কোন সুখ নেই।
মুসাফির একদিন রাতে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে রাত অতিবাহিত করে। প্লাটফর্মে রাতে দেখে প্লাটফর্মে শুয়ে থাকা কারো মনে শান্তি নেই।
মুসাফির একদিন সন্ধ্যায় আশ্রয় নেয় একটি মন্দিরের পাশে। রাত ২ টার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখে পুরোহিত মন্দিরের দান বাক্সের টাকা
গুনছে আত্মসাৎ এর জন্য। মুসাফির এই ঘটনা দেখে পুরোয় বিস্মৃত হয়ে যায়।
এবার পরের দিন একটা গীর্জার খোঁজ করে সারাদিন। রাতে গীর্জার পাশে থাকার জন্য।
সেখানেও দেখে একই অবস্থা।
একদিন গ্রীষ্মকালে একটা আম গাছের নিচে আশ্রয় নেয়। আম গাছটি অনেক বড়। গাছটিতে প্রচুর আম ধরেছে। রাতে দেখে দুজন চোর গাছ থেকে আম পারতেছে।
মুসাফির এভাবে শান্তির অন্বেষণের আপ্রাণ চেষ্টা করে।
এরপর একদিন রাত ১০ টায় চা খেতে একজন মুসলমানের চায়ের দোকানে যায় । মুসলমান লোকটি তখন দোকান বন্ধ করবে,এমতাবস্থায় মুসাফির সেখানে যায়। চা খাওয়ার পর মুসাফির টাকা দিতে গেলে, দোকানদার বলে এই চায়ের বিনিময়ে উনি টাকা নিবেন না। মুসাফির পুরোয় আশ্চর্য হয়ে যায়! মুসাফির বলে,আপনি বলেন কি? চায়ের জন্য টাকা নিবেন না!
দোকানদার বলে,আমি রাতে দোকান বন্ধ করার সময় কারো কাছে চায়ের টাকা নেয় না। মুসাফির বলে,কেন? চায়ের দোকানদার বলে, একাজে আমি শান্তি পাই। শান্তি পাই আমার মন।
মুসাফির শান্তির রহস্য খুঁজে পাই।
মানুষের মন এমন একটি বস্তু যা মানুষের উপকার করতে পারলে, পরিতৃপ্তি পায়।
মানুষের ক্ষতি হলে, তা দেখে ভীষণ কষ্ট পায়।
মনের শান্তি বিরাজ করে,মানুষের অন্তরের অতল গহ্বরে।
যোগাযোগ
বার্তা বিভাগঃ 01788-729304, 01883-306048
ই-মেইল: shadhinsurjodoy@gmail.com
কার্যালয়: ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | স্বাধীন সূর্যোদয় | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।