মোঃ মিলন হক
রাতিয়া একজন চোর। তিনি চোরদের সর্দার।
এক দিন মধ্যে রাতে, রায় পাড়ায় চুরি করতে যায়। সঙ্গে ছিল তার ২জন সাগরেদ অমলেশ ও বিরু। ২ টি গরু চুরি করে নিয়ে আসার সময়। গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে বৃদ্ধ নিমাই রায়ের বাড়ির কাছে আসলে। নিমাই রাতে হিমানী নদী থেকে মাছ ধরে বাড়ি ফেরায় তাদেরকে দেখে চোর,চোর বলে চিৎকার শুরু করে।
রাতিয়া তার হাতের ছুরি নিক্ষেপ করে নিমাইয়ের বুকের উপর। চিৎকার শুনে তার ছেলে দুলাল রায় দৌড়ে এসে, দেখে তার বাবা ছুরিকাঘাত হয়েছে। নিমাই দুলালকে বলে,রাতিয়া ছুরি নিক্ষেপ করেছে।
কিছুক্ষণ পর নিমাই মারা যায়।
রাতিয়া ও তার সাগরেদরা গরু ২টি মাঠের মধ্যে ফেলে, যে যার মতো পলায়ন করে।
গ্রামের লোকেরা নখদর্পণে খোঁজাখুঁজি করে অমলেশ ও বিরুকে ধরেছে কিন্তু তারা রাতিয়ার খোঁজ পায়নি।
রাতিয়া জান বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দেয়। সাঁতার কেটে অনেক দূরে চলে যায়। ঊষার কিরণে সাঁতার থামিয়ে দেখে বালুচরে এসে পড়েছে। বালুচর জন বিচ্ছিন্ন। বিস্তৃত অংশ জঙ্গলে আবৃত।
সারারাত তন্দ্রা হীন ক্লান্ত শরীর নিয়ে, বালুচরে ঘুমিয়ে পড়ে। নিদ্রা থেকে উঠে দুপুরের পর।
তীব্র ক্ষুধার জ্বালায় অসহ্য হয়ে পড়ে। জঙ্গলের প্রবেশ করে খাবারের সন্ধানে। জঙ্গলে কলার গাছ গুলোতে পাকা কলা দেখতে পাই। জঙ্গলের মধ্যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়।
আশেপাশে লোকালয় দেখতে না পেয়ে,
কিছু তালপাতা ও বনের মধ্যে বিভিন্ন গাছের ডাল ও বাঁশ দিয়ে একটি ঘর বানায়।
লোকালয় কোন দিকে তা নির্ণয় করতে পারে না। সাগরেদদের কে ধরেছে, রাতিয়া স্পষ্ট শুনতে পেরেছে। তার উপর পূর্বে হাসেম আলীর গরু চুরির মামলা আছে।এখন আবার নিমাইয়ের মৃত্যু। এই ভয়ে লোকালয়ে যেতে সাহস পায় না।
বালুচরে বাস শুরু করে। দুপুরে খিদে পেলে, জঙ্গলে ঢুকে ফলমূল খোঁজে। নদীর পানি পান করে,এভাবে কয়েক দিন যায় ।
একাই থাকতে ভালো লাগে না। অনেক দিন ভাত,মাছ,মাংস কিছুই খেতে পায় না। মাংস খাওয়ার প্রচণ্ড ইচ্ছে হয়!এর জন্যে জঙ্গলে পাখি শিকার করতে ঢুকে।একা একা জঙ্গলের মধ্যে শুরুতে প্রচণ্ড ভয় পেত। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। পাখি শিকার করে ,নদীতে মাছ ধরে, পাথরের ঘর্ষণে ডালপালা দিয়ে আগুন তৈরি করে পুড়িয়ে খায়।
বন্যায় প্লাবিত হয়ে, বালুচরে তার ঘর ভেঙে যায়। রাতিয়া জঙ্গলে আশ্রয় নেয়।কিছুদিন পর রাতিয়া আবার বালুচরে নয়াবসত
বানায়।
কাজের খোঁজে কালু,মদন,সমরেশ বাড়ি ছেড়ে অনেক দূরে নৌকায় যায়। সন্ধ্যা নেমে আসে চাঁদনী ঘাঁটে। নৌকা থামিয়ে রাতে থাকার ও খাওয়ার জন্য জমিদার রাজ নারায়ণের বাড়িতে যায়। রাজ নারায়ণ তার বাড়িতে কিছু দিনের জন্য গরুর রাখাল হিসেবে কাজ করতে বলে।
তারা রাজ নারায়ণের বাড়িতে কাজ করে। রাজ নারায়ণের বাড়িতে অনেক মুসলমান প্রজা কাজ করে।
একদিন রাজ নারায়ণের বাড়িতে গানের অনুষ্ঠান হয়।ঐ অনুষ্ঠানে রাজ নারায়ণের বাড়িতে আক্রমণ করে তার শত্রুরা।গানের অনুষ্ঠানের মধ্যে মারামারি হানাহানি শুরু করে দু’পক্ষের লোক। এক জন মুসলমান প্রজার নাম নিজাম।তার সতের বছরের যুবতী মেয়ে শিমু অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কালু শিমুর পাঁজা কোলে নিয়ে নিজামের বাড়িতে নিয়ে যায়।
নিজামের স্ত্রী এবং তার মা তাদের মেয়েকে অপর পুরুষের হাতে দেখে পুরোয় বিস্মৃত হয়!
পরের দিন কালু ও শিমুর বিষয়ে লোকজন গুজব করে। রাজ নারায়ণের কাছে এসব কথা যায়।রাতে বৈঠক বসে। বৈঠকে কালু ও শিমুর বিয়ে হয়।
কালু পরের দিন মদন,সমশের ও তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে নদী পথে বাড়ির দিকে রওনা করে। নদীতে কোথাও ঘাট না পেয়ে, রাতেও নৌকা চালায়। নদীতে মধ্যে রাতে ঝড় শুরু হলে,নৌকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। শিমু বেহুঁশ হয়ে পড়ে। কালু ঝড়ের মধ্যে নৌকা সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝড়ের মধ্যে নৌকা থেকে শিমু নদীতে পড়ে যায়।
মদন,কালু ও সমশের নৌকা থেকে গিয়ে খেয়া পাড়ে পড়ে। মদন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে কালু, সমশের আছে। শিমু তাদের পাশে নেই।
কালুকে জাগ্রত করে বলে শিমু নেই। তারা শিমুর খোঁজ করে,অনেক দূর পর্যন্ত । শিমুর দেখা না পেয়ে কালু পাগল হয়ে যায়!মদন,সমশের কালু কে নিয়ে নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
শিমু ভাসতে ভাসতে নদীর বালুচরে থেমে।
রাতিয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে দূর থেকে দেখে একজন নারীর মতো কে যেনো শুয়ে আছে।
কাছে গেলে দেখে একজন মহিলা।
রাতিয়া দেখে,মহিলাটি বেহুঁশ হয়ে আছে।
রাতিয়া শিমুর মুখে পানি দেয়। অনেক ক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসে।
রাতিয়া শিমুকে জিজ্ঞাসা করে , সে কীভাবে নদীতে ভেসে এলো?কোথা থেকে ভেসে এসেছে?
শিমু বলে,তার স্বামীর সাথে এসেছে।
কোথায় তার শ্বশুর বাড়ি কিছুই জানে না!
তার বাপের বাড়ি রাতিয়ার অচেনা। শিমু রাতে কোন পথ দিয়ে যাচ্ছিল কিছুই বলতে পারে না।
এরপর শিমুকে রাতিয়া তার ঘরে নিয়ে যায়। ঘরের মধ্যে কলা ও কাঁঠাল ছিল।কলা ও কাঁঠাল খেতে দেয়।
রাতিয়া তার ক্লান্তি কাটানোর জন্য লোক পেয়ে বেশ উৎসাহিত বোধ করে।রাতিয়া তার ঘরে শিমুকে থাকার ব্যবস্থা করে, দিয়ে সে বারান্দায় শুয়ে থাকে। শিমুর জঙ্গলের মধ্যে একজন পুরুষ মানুষের সঙ্গে একা থাকতে ভয়ও লাগে। কিছু দিন পর একদিন রাতে বজ্রপাত শুরু হয়।
শিমু রাতিয়াকে ঘরের মধ্যে আসতে বলে,
রাতিয়া ঘরে এসে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।
শিমু তার পাশে বসতে বলে,রাতিয়া তার পাশে বসে।
বাহিরে ঝমঝম বৃষ্টির বোল আর বজ্রপাত।
শিমু বজ্রপাতে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে।
রাত্রি গভীর হলে, রাতিয়া ও শিমু দু`জন খাটের মধ্যে শুয়ে পড়ে। মনের অজান্তেই দুটি মন মিলে একাকার হয়ে গেছে। ভোরে ও বৃষ্টির বোল সমান তালে পড়তে থাকে।
বনের ফলমূল খেয়ে ও পাখি শিকার করে, বালুচরে তাদের জীবন অতিবাহিত হতে লাগলো।