তরিকুল ইসলাম
আমি হারিয়ে যেতে চাই এমন এক দূরত্বে, যেখানে আমার অস্তিত্বের স্মৃতি ধীরে ধীরে মুছে যায় দিগন্তের রংধনুর শেষ প্রান্তে। আমি চাই, আমার পদচিহ্ন মুছে যাক তপ্ত মরুভূমির বালিয়াড়িতে, যেখানে প্রতিটি ঝড় আমাকে আরেকটু দূরে নিয়ে যাবে।
আমি চাই এমন এক ভুবন, যেখানে আমার না থাকাটা হবে বাতাসে মিশে যাওয়া একটি গানের মতো—শ্রুতিমধুর, কিন্তু অদৃশ্য। তোমার জ্বরঘেরা রাতে, তোমার ছায়ার কাছে এসে দাঁড়ানোর অক্ষমতাকে বুকে চেপে আমি সেই অচেনা পৃথিবীতে বিলীন হতে চাই, যেখানে চোখের জল শুকিয়ে যায় হাওয়ার গতি ছুঁয়ে।
তোমার ভালো না লাগার পৃথিবীতে, আমার ভালো থাকা যেন এক নিষিদ্ধ বাসনা হয়ে থাকে। তাই আমি চাই এতটা দূরে হারিয়ে যেতে, যেখানে আমার ভালো না থাকাটা আর কোনো ব্যথার জন্ম দেয় না, বরং প্রশান্তির মতো ঝরে পড়ে তোমার পৃথিবীর উপর।
শ্রাবণের অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে যাবে শহরের প্রতিটি কাঁচের জানালা, প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাখি—কিন্তু আমার হৃদয়ের আকাশ শুকনো থাকবে। আমি চাই এমন এক প্রান্তর, যেখানে পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপ থেকে জন্ম নেয় বিষণ্ণতার নদী, যার জল ছুঁয়ে যায় না আমার অনুভূতির কোলাহলকে।
আমি হারিয়ে যেতে চাই এক অনন্ত শূন্যতায়, যেখানে ভালোবাসার নাম নেই, প্রতিশ্রুতির ভার নেই। আমি চাই না কোনোদিন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে, “আমাকে ভালোবেসে একবার বুকের উষ্ণতায় জড়িয়ে নাও।” আমি চাই আমার আকাঙ্ক্ষাগুলো হারিয়ে যাক এক গভীর নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে।
পৃথিবী থাকবে, মানুষ থাকবে, তোমার হাসির ঝিলিক ঠিক আগের মতো থাকবে। শুধু আমি যেন পরিণত হই এক বিলুপ্ত অধ্যায়ে, একটি গল্পের অক্ষরবিহীন পৃষ্ঠায়।
আমি ততটাই দূরে যেতে চাই, যেখানে তোমার ভালো থাকাটা আর আমার না থাকাটা এক মহাকাব্যের উপসংহার হয়ে থাকে। সময়ের অতলে মিশে যাক আমার নাম, আমার স্মৃতি, আর এই গভীর ক্লান্তি।
আমি চাই, ঠিক ততটাই দূরে হারিয়ে যেতে, যেখানে দিগন্তও হার মানে…।